বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা সকল শ্রেণীর জন্য

বঙ্গবন্ধু টানেল অনুচ্ছেদসুপ্রিয় পাঠক, বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা সকল শ্রেণীর জন্য আজকের এই পাঠে তুলে ধরবো। তাই আপনিও যদি এই বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা সম্পর্কে জানতে চান তাহলে আর কোথাও খোঁজাখুঁজি না করে এখানেই শেষ পর্যন্ত মনোযোগ সহকারে পড়তে থাকুন।
বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা
বঙ্গবন্ধু টানেল অথবা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল আমাদের বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। এই টানেলটি নদীর তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে আনোয়ারার সাথে সংযোগ স্থাপন করেছে।

পেজ সূচিপত্রঃ

বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা

বঙ্গবন্ধু টানেল আমাদের বাংলাদেশের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরে অবস্থিত। এই সুড়ঙ্গের মধ্যখান দিয়ে ঢাকা চট্টগ্রাম কক্সবাজার এই তিনটি মহাসড়ক যুক্ত করবে। এটি বাংলাদেশের কর্ণফুলি নদীকে দুইভাগে ভাগ করেছে। চট্টগ্রামের এই নদীর ওপরে দিয়ে রয়েছে ৩টি সেতু। চট্টগ্রামের কাছেই এইসকল সেতু হওয়ার কারণে এই সকল সেতুতে সবসময় ভীড় অনেকটাই বেশি থাকে।

বঙ্গবন্ধু টানেল রচনার এই অংশে আমরা জানবো পুরো বঙ্গবন্ধু টানেল কিভাবে তৈরি করা হয়েছে। কোথাকার ইঞ্জিনিয়াররা তৈরি করেছেন। কত টাকা বাজেট প্রণয়ন করা হয়েছে এই সকল বিষয়ে সবিস্তারে জানবো। তাহলে চলুন এই পর্বের মাধ্যমে আমরা জেনে নেই বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা সম্পূর্ণ। যেটি সকল শ্রেণির জন্য ব্যাবহার করা যাবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা। ভূমিকা

আমাদের বাংলাদেশের সকল মানুষজনই স্বপ্ন দেখে এক নতুর সম্ভাবনা ময় দেশের। নতুন এক দিগন্ত উন্মোচনের এবং ব্যাপক পরিমাণে সকল উন্নতি এবং সমৃদ্ধির। এমন এক সময় ছিলো যখন এই বাংলাদেশের মানুষজনকে বলা হতো ভাবপ্রবণ এক জাতি হিসেবে। তার পাশাপাশি এটাও বলা হলো বাঙ্গালিরা ভিতুর জাতি, ভেতো এক বাঙালি। এমনটি সেই সময়ে বলা হয়ে থাকলেও মাংলার মানুষজন দেখিয়ে দিয়েছে তারা কতটা কর্মঠ।
বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা
বাংলার মানুষজন এমন ধারণা বদলে দিয়ে তারা পুরো বিশ্বকে চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে বাংলার মানুষজন কতটা সংগ্রামি এবং সাহসী। তার পাশাপাশি তারা কতটা ত্যাগ স্বীকারকারি এবং স্বপ্নদ্রষ্টা। এই কাজের ফলেই এখন সারা পৃথিবীর মানুষ জানে বাংলার মানুষজন একন পুরো বিশ্বের মধ্যে উন্নয়নের এক রোল মডেল। বাংলার মানুষজন তাদের অসীম ত্যাগের ফলে দেখিয়ে দিয়েছে একটি মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন করার।

আর এই মেগা প্রকল্পটির নাম হলো "বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল"। যেহেতু এই টানেলটি কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তাই অনেকেই আবার এটিকে বলে থাকেন "কর্ণফুলী টানেল"। এই টানেলটি তৈরির ফলে বাংলাদেশের বাণীজ্যের ওপরে এক দারুণ প্রভাব ফেলবে। তার ফলে তৈরি হবে এক বৈপ্লবিক সূচনার। আর এই টানেলের মধ্যমে নদীর দুই তিরবর্তি মানুষজনকে একসাথে জুড়ে দিতে সক্ষম হবে। আর এর ফলে দুইপাশের মানুষজনের মধ্যে যোগাযোগের আসবে একটি বৈপ্লবিক পরিবর্তন।

বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা করার মাধ্যমে আসবে বাংলাদেশের মানুষজনের ভেতরে একটি নতুন সম্ভাবনার দ্বার। আর তাই তো এই টানেল নিয়ে সকল বাংলাদেশি মানুষজনের মধ্যে একটি উত্তেজনার কাজ করে। সাই সাথে বাংলার লাখো কোটি মানুষের আবেগের সাথে জড়িত এই টানেলটি। কত স্বপ্ন কত আশা জুড়ে রয়েছে এটি ঘিরে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল পরিচিতি

বাংলাদেশের এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল চারটি লেন বিশিষ্ট। এবং অত্যাধুনিক একটি সুরঙ্গ পথ ধরার নির্মিত করা হয়েছে। এই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলটি যেহেতু কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে তাই এটিকে অনেকেই কর্ণফুলী টানেল বলেও অভিহিত করে থাকেন। এই টানেলটি আমাদের বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরের কর্ণফুলি নদীর তলদেশ নিয়ে প্রবাহিত হয়েছে।
এই টানেলটি বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৬ সালের ১৪ই অক্টোবর বর্তমান চীনের রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনার কাজ উদ্বোধন করেন। আর এই বঙ্গবন্ধু টানেল রচনার একটি প্রধান কাজ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সালে এর নির্মাণের কাজ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধনের কাজ সম্পন্ন করেন। এই টানেলটিই বাংলাদের প্রথম সর্ববৃহৎ সুড়ঙ্গ পথ। এর এটা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যেও সর্ববৃহৎ একটি সুড়ঙ্গ পথ।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণ প্রকল্পের উদ্দেশ্য

আমরা সকলেই জানি আমাদের এই বাংলাদেশ হল একটি নদীমাতৃক দেশ। আর এই নদীমাতৃক দেশে চট্টগ্রাম শহরকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছে কর্ণফুলী নদী। যার এক ভাগে রয়েছে নগর বন্দর এলাকা এবং অপর প্রান্তে রয়েছে শিল্প এবং ভারী পণ্যের এলাকা। যেটি আমাদের বাংলাদেশের অর্থনীতিতে মারাত্মকভাবে প্রভাব ফেলছে। আমরা সকলে হয়তো অবগত হয়ে থাকব এই কর্ণফুলী নদীর উপর দিয়ে যাতায়াত সহজ করার জন্য তিনটি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে।

তবে এই তিনটি সেতু নির্মাণ করা হলেও সেটি চলাচল করার জন্য যথেষ্ট পরিমাণে নয়। যার ভালো যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও এই তিনটি সেতুর ফলে নদীর নিচের স্তরে পোলি জমে গিয়ে নদীর গভীরতা আস্তে আস্তে কমিয়ে আনছে। যেটি আমাদের প্রকৃতির জন্য অনেকটাই হুমকি স্বরূপ। আর এই পলির সমস্যা মোকাবেলা করার জন্য কর্ণফুলী নদীর তলদেশ দিয়ে চলাচলের রাস্তা অর্থাৎ সেতু নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়।

আর তাই বাংলাদেশের সরকার কর্ণফুলী নদীর দুই প্রান্তকে একসাথে জুড়ে দেওয়ার জন্য নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। যেটা এই নদীর দুই প্রান্তের মানুষজনকে একসাথে যোগসূত্র করে তুলবে। যার ফলে মানুষজনের চলাচলের হয়রানি দূর হবে। এছাড়াও টানেল নির্মাণের আরো বেশকিছু কারণ রয়েছে। যেগুলো নিম্নে উল্লেখ করা হলো।
  • চট্টগ্রাম শহরের নিরবচ্ছিন্নভাবে এবং যুগোপযোগী সড়ক যোগাযোগব্যবস্থা গড়ে তুলবে।
  • এশিয়ান সকল সড়কপথের সাথে আধুনিক যোগাযোগ ব্যাবস্থা গড়ে তুলবে।
  • ডাউন টাউন শহরকে খুব সহজেই যুক্ত করতে সক্ষম হবে।
  • চট্টগ্রামের যেই সকল পোর্ট রয়েছে সেগুলো সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।
  • এই টানেল নির্মাণের কাজ সঠিকভাবে সম্পন্ন হলে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম শহরকে খুব সহজেই ওয়ান সিটি টু টাউন মডেল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব হবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের উপযোগিতা

আমরা সকলেই জানি বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ একটি নদীর নাম হলো চট্টগ্রামের কর্ণফুলি নদী। এই নদীটি বাংলাদেশের বাণিজ্যিক যোগাযোগের পথকে বাধা হয়ে দাড়িয়েছিলো। এই কর্ণফুলি নদীর তলদেশ গিয়ে প্রবাহিত বঙ্গবন্ধু টানেল বাণিজ্যিক খাতে এক বৈপ্লবিক সূচনার সৃষ্টি করেছে। ফলে দূর হয়েছে বাণিজ্যিক বাধা। যদিও এই নদীর ওপর দিয়ে ৩টি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে বাণীজ্যিক কাজকে সহজ করতে।
তবে সেটিও এই অঞ্চলের বাণিজ্যের জন্য যথেষ্ট নয়। এছাড়া এই নদীর ওপর দিয়ে যেহেতু সেতু নির্মাণ করা হয়েছে, আর এই সেতু নির্মাণের জন্য নদীর তলদেশ দিয়ে পলি জমে গিয়েছে। আর এটা অনেকটাই নদীর জন্য হুমকিস্বরূপ। আর এই কারণেই কর্ণফুলি নদীর তলদেশ দিয়ে টানেল নির্মাণের কথা চিন্তা করা হয়েছে। তাছাড়া যদি আরো একটি সেতু নদীর ওপর দিয়ে করা হতো তাহলে সেটা নদীর জন্য আরো একটি হুমকির কারণ হয়ে দাড়াতো।

বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণের স্বপ্ন

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে একটি জনসভায় প্রায় ১৩ বছর পূর্বে চট্টগ্রামের মানুষজনকে এই স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন যে এই নদীর তলদেশ দিয়ে একটি টানেল তৈরি করা হবে। আর সেই প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যেই ১০ জুন ২০১৪ সাল বেইজিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে সমঝতা হয়। আর এই সমঝতার ফলেই সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত করা হয়।
বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা
সেই স্বাক্ষরিত সমঝোতার ফলেই ১৪ অক্টোবর ২০১৬ সালে বাংলাদেশের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং চীনের বর্তমান রাষ্ট্রপতি শি জিন পিং মিলে এই প্রকল্পের জন্য ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণ করেন। এই ভিত্তি প্রস্তর নির্মাণ কাজের পরে ২৪শে ফেব্রুয়ারি ২০১৯ সাল চট্টগ্রামের পতেঙ্গা শহরে বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্প কাজের শুরুর জন্য কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ডে একটি সুইচ টেপার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই টানের তৈরির খনন শুরুর কাজ উদ্বোধন করেন।

বঙ্গবন্ধু টানেল তৈরির অর্থায়ন

বাংলাদেশের প্রথম সর্ববৃহৎ প্রকল্প বঙ্গবন্ধু টানেল রচনার কাজটি বাংলাদেশ সরকার এবং চিনের সরকারের যৌথ অর্থায়নে এই বঙ্গবন্ধু টানেল বাস্তবায়নের কাজ শুরু করা হয়। এই বঙ্গবন্ধু টানেল প্রকল্পটি তৈরির জন্য মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ হাজার ৩৭৪ কোটি ৪২ লাখ টাকা। আর এই চুক্তির টাকার মধ্যে বাংলাদেশ সরকার প্রদান করবে ৪ হাজার ৪৬১ কোটি ২৩ লাখ টাকা।

আর এই চুক্তি অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু টানেল তৈরি করার জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংক ঋণ দিবে ২০ বছরের জন্য ৫ হাজার ৯১৩ কোটি ১৯ লাখ টাকা। আর এই কাজটি দেওয়া হয় চীনের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কমিউনিকেশন ও কনস্টাকশন কোম্পানি লিমিটেডকে। এই কম্পানিকে সংক্ষেপে বলা হয় (সিসিসিসি)। যেই প্রতিষ্ঠানের কাজ হচ্ছে টানেল নির্মানের কাজ তদারকি করা।

বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা নির্মাণ তথ্য

চার লেন বিশিষ্ট এই সুরঙ্গ পথটি নির্মাণ করার কাজ করেছে চীনা দেশের একটি কোম্পানি যার নাম হল কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি লিমিটেড। সুরঙ্গ কাজের জন্য বিভিন্ন ধরনের জিনিসপাতের প্রয়োজন হয়। আর এই জিনিসপাতি বাংলাদেশে তৈরি না করা হয়ে চীন দেশের ঝেনজিয়াংয়ে উৎপাদন করে বাংলাদেশে আনা হয়। তবে এই সুরঙ্গ পথের কাজটি 2022 সালের মধ্যে শেষ হওয়ার কথা ছিল।

তবে সেই কাজটি শেষ না হলেও ২০২৩ সাল পর্যন্ত এই সুরঙ্গ পথের কাজ নির্মাণাধীন অবস্থায় ছিল। বঙ্গবন্ধু এই টানেলের উচ্চতা ১৬ ফুট অথবা ৪.৮ মিটার। এবং প্রতিটি টিউবের চওড়া রয়েছে ১০.৮ অথবা ৩৫ ফুট। বঙ্গবন্ধু টানেল এখানে যে দুটি টিউব রয়েছে প্রতিটি টিউবের দূরত্ব একটি থেকে অন্যটির পাশাপাশি দূরত্ব হলো ১২ মিটার। এই টানেলের প্রস্থ ৭০০ মিটার এবং দৈর্ঘ্য প্রায় ৩ হাজার ৪০০ মিটার পর্যন্ত।

এছাড়াও এই টানেলটি তৈরির পশ্চিম পাশে এবং পূর্ব পাশে থাকা ৫.৩৫ কিলোমিটারের এপ্রোচ রোড রয়েছে এবং 727 মিটারের ওভারব্রিজ রয়েছে। যেটি চট্টগ্রাম শহরের সঙ্গে আনোয়ারা উপজেলা কে সরাসরি সংযুক্ত করেছে। যেটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রভাব কে ব্যবসায়ীর দিক থেকে উন্নত করার জন্য আরো ভালোভাবে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

বঙ্গবন্ধু টানেলের নকশা ও উপকরণ ব্যবহার

যখন বঙ্গবন্ধু টানেল তৈরি করার কথা চিন্তা ভাবনা করা হয় তখন সবার প্রথমে চিন্তাভাবনা করা হয় এর সকল চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলোকে। আর এই চ্যালেঞ্জের বিষয়গুলোকে চিন্তা ভাবনা করে সামনে রেখেই তারপরে এই টানেল তৈরির নকশা করা হয়। এবং সেই অনুযায়ী এই টানেল তৈরির জন্য সরঞ্জাম বা উপকরণ ব্যবহার করা হয়।
বঙ্গবন্ধু টানেল তৈরি করার প্রথম যে উপকরণ রয়েছে সেটি হল শিল্ড মেশিন। যেটি সম্পূর্ণ চীনা কোম্পানির প্রযুক্তি তৈরি করা। আর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করার মাধ্যমে বিশেষভাবে বিশেষ রূপে এই টানেলটি তৈরি করা হয়েছে। নদীর পানি টানেল ফেটে যেন ভেতরের না প্রবেশ করতে পারে সেই দিকে সঠিকভাবে নজর রাখা হয়েছে। আর সেজন্যই প্রতিটি সিগমেন্টে ব্যবহার করা হয়েছে অ্যান্টিসিপেস ম্যাটেরিয়াল।

বঙ্গবন্ধু টানেলের ভেতরে যেন সহজেই বাতাস প্রকাশ করতে পারে সেজন্য ব্যবহার করা হয়েছে ২০টি অত্যন্ত শক্তিশালী পাখা। টানেলের ভেতরে জানো গাড়ি চলাচলের জন্য কোন অসুবিধা না হয় সেজন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে আলো সরবরাহের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়াও এই টানেলের নিচে রাখা হয়েছে পাম্পঘর। যাতে করে যদি কোন দুর্ঘটনা বসতো টানেলের ভেতরে কোন প্রকার তরল পদার্থ প্রবেশ করে তাহলে সেটা যেন বাতাস দিয়ে বের করে দেয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের ব্যবহারিক দিক

বঙ্গবন্ধু টানেলের বেশ কিছু ব্যবহারিক দিক রয়েছে। তার মধ্যে প্রথমটি হল এই টানেল চালু হওয়ার প্রথম বছরেই চলাচল করতে পারবে 63 লাখ গাড়ি। আর সেটি ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পেয়ে দেড় কোটি ছাড়িয়ে যাবে। এমন একটি প্রতিবেদন প্রকল্পের ফিজিবিলিটি স্টাডি প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়। তারা আরো জানায় যে যখন এই টানেলটি চালু করা হবে তখন থেকে প্রথম বছরে গাড়ি চলাচলের সংখ্যা কিছুটা কম হবে।

তাদের মধ্যে রয়েছে কিছুটা 51 শতাংশের কন্টেইনার এবং বাকিদের সকল পরিবহন গাড়িগুলো রয়েছে যেমন পরিবহন গাড়ি টেইলর অথবা বিভিন্ন ধরনের ট্রাক ভ্যান। আর বাকি যে ৪৯ শতাংশ বাকি রইল এই ৪৯ শতাংশের মধ্যে রয়েছে ১৩ লাখ পরিমান বাস অথবা মিনিবাস এবং 12 লাখ বিভিন্ন ধরনের কার। এছাড়াও যে সকল বিভিন্ন ধরনের জিপ অথবা ছোট গাড়ি রয়েছে সেগুলোও চলাচল করবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল রচনার অর্থনৈতিক ও সামাজিক গুরুত্ব

আমরা সকলেই জানি যে বর্তমান সময় বাংলাদেশের অন্যতম একটি মেগা প্রকল্প হল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেল। আর এই টানেলটি তৈরীর ফলে বাংলাদেশের সকল ধরনের আর্থসামাজিক ব্যবস্থার উপরে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এটি শুধুমাত্র যে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে যোগাযোগ নেটওয়ার্ক গড়ে তুলবে সেটিই নয়। বরং এটি আরো দক্ষিণা অঞ্চলে যে সকল শিল্প কারখানা গুলো রয়েছে সেগুলোর ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সকল ধরনের প্রভাব ফেলবে। নিম্নে আরো কিছু ধরনের এর অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব তুলে ধরা হলো।
  • বঙ্গবন্ধু টানেলের মাধ্যমে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এই সকল এলাকার মধ্যে আধুনিক সকল ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা করে উঠবে।
  • এশিয়ার সকল ধরনের হাইওয়ের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবে।
  • চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাশে যে সকল প্রস্তাবিত শিল্প এলাকা গুলো রয়েছে সেগুলো খুব সহজেই উন্নয়ন করে সম্ভব হবে।
  • চট্টগ্রামের পশ্চিম পাশের সমুদ্র বন্দর এবং বিমানবন্দরের সাথে সহজেই এবং উন্নতমানের যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা সম্ভব হবে।
  • চট্টগ্রাম শহরের পূর্ব পাশের যে সকল শিল্প কারখানাগুলো রয়েছে সেই সকল শিল্প কারখানাগুলো থেকে খুব সহজেই মালামাল পশ্চিমাঞ্চলে পরিবহন করা সহজ হবে।
  • এটি তৈরি করার ফলে বাংলাদেশের বেকারত্ব সমস্যা হ্রাস পাবে। তার সাথে সাথে বাংলাদেশের ব্যাপকভাবে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন কাজ করা সম্ভব হবে।
উপরের এই সকল উল্লিখিত অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্ব ছাড়াও আরো অনেক ধরনের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক গুরুত্বের উপরে প্রভাব সৃষ্টি করবে এই বঙ্গবন্ধু টানেল। যার ফলে আমাদের বাংলাদেশের দারিদ্রতা দূরীকরণ সহজ হবে। দেশের অর্থনৈতিক বৈষম্যের উপরে ইতিবাচক প্রভাব বিস্তার করবে। দেশের আর্থ সামাজিকতা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে। মাথাপিছু আয় এর পরিমাণ এবং শিল্প বাণিজ্য করা সহজ হবে।

বঙ্গবন্ধু টানেল এর ইতিবাচক প্রভাব

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উপদ্রেষ্টাগণ জানান যে বাংলাদেশের এই বঙ্গবন্ধু টানেল রচনার ফলে বাংলাদেশের ফিনান্সিয়াল ইকোনমিক্স এর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে প্রায় 6.19 শতাংশ। এ ছাড়া যদি বেনিফিট রেশিওর কথা চিন্তা করা হয় তাহলে সেটি দাঁড়াবে আমাদের দেশে ১.০৫ শতাংশ। যার প্রতিশ্রুতিতে বাংলাদেশের জিডিপির উপরে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করবে। আর এর ফলেই বাংলাদেশের জিডিপির পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে ০.১৬৬ শতাংশ।

উপসংহার। বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা

বঙ্গবন্ধু টানেলের উপসংহারে এটাই বলা যায় যে প্রযুক্তি এবং কারিগরি নির্ভরতার যুগে কোনকিছুর উন্নয়নই থেকে থাকে না। দেশের ও মানুষের মহত্তর কল্যাণ করার লক্ষ্যে সকল ধরণের নিখুত পদক্ষেপ আমাদের গ্রহণ করতে হবে। বর্তমান বাংলাদেশের সরকার সকল ধরনের উন্নয়ন করার জন্য বিজ্ঞাণের ব্যাবহার ও উৎকর্ষকে সাধন করে যাচ্ছে।

বঙ্গবন্ধু টানেল সম্পর্কে সাধারণ জ্ঞাণ (FAQ)

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু টানেলের ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রা কত?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু টানেলের ভূমিকম্প সহনীয় মাত্রা হলো ৯

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী দেশ কোনটি?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু টানেল নির্মাণে আর্থিক সহায়তা প্রদানকারী দেশের নাম হলো চীন।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অথবা কর্ণফুলী টানেলের এর দৈর্ঘ্য কত?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের এর দৈর্ঘ্য হলো ৩.৩২ কিলোমিটার (২.০৬মাইল)।

প্রশ্নঃ কর্ণফুলী টানেলের টিউবের দৈর্ঘ্য কত?
উত্তরঃ কর্ণফুলী টানেলের টিউবের দৈর্ঘ্য হলো ২.৪৫ কিলোমিটার।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু টানেল পানির নিচে কত ফুট?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু টানেল পানির নিচে ৩৫ ফুট প্রশস্ত ও ১৬ ফুট উচ্চতা।

প্রশ্নঃ কর্ণফুলী টানেল এর গভীরতা কত ফুট?
উত্তরঃ কর্ণফুলী টানেল এর গভীরতা ৯-১১ মিটার।

প্রশ্নঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা কত?
উত্তরঃ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান টানেলের সর্বোচ্চ গভীরতা হলো ১৮ থেকে ৩১ মিটার পর্যন্ত।

লেখকের মন্তব্য। বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা

বঙ্গবন্ধু টানেল রচনা সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেলের মধ্যে আমরা আলোচনা করেছি। এই রচনা সকল শ্রেণীর জন্য ব্যাবহার করা যাবে। আশা করছি আপনি সম্পূর্ণটি পড়ার মাধ্যমে এই বঙ্গবন্ধু টানেলের রচনা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এমন আরো আর্টিকেল প্রতিদিন নিয়মিত পড়ার জন্য আমাদের সাথেই থাকুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

পেপারস্পট২৪ এর নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url